১ম পর্বের লিংক
--জানি না কেন এত হাসি পেল আপনার কথা শুনে। আচ্ছা আপনি কি সবসময় এভাবেই কথা বলেন?
সুচীর কথা শুনে মুচকি হাসল নীরব। কিছু বলল না। নীরবকে প্রথম প্রথম সূচীর যা মনে হচ্ছিল এখন আর তা মনে হচ্ছে না। উল্টো নীরবকে ভালো লাগতে শুরু করেছে। ওর হাসিতে অদ্ভুত রকমের একটা সরলতা আছে। সূচী মনে প্রানে বিশ্বাস করে, একটি মানুষের হাসিই বলে দেয় সে আসলে মানুষ হিসেবে কেমন। কোনো খারাপ মানুষের হাসি কখনো এত নিষ্পাপ হতে পারেনা।
--এই দেখুন, আমরা কিন্তু এখন পর্যন্ত একে অপরের নামটাও জানিনা। আমি নীরব। আপনি?
--সূচী।
--চমৎকার নাম। বাই দ্যা ওয়ে কক্সবাজার যাওয়া হচ্ছে কেন?
--অনার্স পরীক্ষা শেষ করলাম। খুব বোরিং লাগছিল কদিন থেকে। ভাবলাম কক্সবাজার থেকে একটু ঘুরে আসি। ওখানে আমার ছোট খালা থাকে। ওনার বাসাতেই উঠব। আমার আরো কিছু কাজিন ও দু’একদিনের মধ্যে ওখানে জয়েন করবে। সবাই একসাথে বিচে ঘুরব, মাস্তি করব। অনেক মজার মজার প্ল্যান আছে।
--আপনার সময়টা বেশ আনন্দে কাটবে বোঝা যাচ্ছে। বেস্ট অব লাক।
--থ্যাংক্স। আচ্ছা আপনার কি প্ল্যান?
--আমার প্ল্যান? এইতো সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিচে হাটাহাটি করব। একা একা মন ভরে সমুদ্র দেখব। উদার সাগররের সাথে হৃদয় কোঠরে জমে থাকা সকল ক্লান্তি, বিষন্নতা, একাকিত্ব ভাগাভাগি করে নিব...
--বাহ বাহ! দার্শনিক মার্কা কথাবার্তাও খারাপ জানেন না দেখছি!! তো আপনি একা একা সমুদ্র দেখবেন?? আজব মানুষ তো!!
--কিছু করার নেই আসলে। ক্লোজ বন্ধুদের মধ্যে অনেকেই দেশের বাইরে চলে গেছে। যারা দেশে আছে তারাও বিয়েসাদি করে পুরোদুস্তর সংসারী। বউকে সঙ্গ দিতে দিতেই একেকজন কাহিল। আমাকে সঙ্গ দেয়ার সময় কারোরই হয়ে উঠেনি।
--ফিল সো স্যাড ফর ইউ। এনিওয়ে আপনি বিয়ে করছেন না কেন?
--কাকে বিয়ে করব বলুন? কেউ তো কাছে আসেনি...কেউ ভালোবাসেনি...
--তার মানে বলতে চান, আপনি কখনো প্রেম করেননি?
--সেই সুযোগ আর পেলাম কই? হৃদয়ে ভালোবাসার সমুদ্র নিয়ে বসে আছি...কেউ তো ভুলেও উঁকি দিয়ে দেখল না।
--আপনি এখনো প্রেম না করে আছেন বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছে।
--কিন্তু এটাই বাস্তবতা। প্রেম কি আর সবার কপালে থাকে বলুন?
--ঠিকই বলেছেন। প্রেম আসলে সবার কপালে থাকেনা। আমিও আপনার মতই প্রেমহীন জীবন কাটিয়ে যাচ্ছি।
--ওহ মাই গড!! বলেন কি? আপনি তো চাইলেও প্রেম না করে থাকতে পারার কথা না! আমি একশ ভাগ নিশ্চিত প্রতিদিন কয়েক হাজার রোমিও আপনার গেইটের সামনে ফুল হাতে দাঁড়িয়ে থাকে শুধুমাত্র আপনাকে একপলক দেখার আশায়। কেউ-ই কি আপনার মন গলাতে পারলনা? এতটাই কঠিন আপনার হৃদয়?
--হাহাহাহা! আপনি এত কাব্যিক সুরে কথা বলবেন না তো প্লিজ। হাসি পায় শুনলে!
--আপনার এই টুকু মিষ্টি হাসির জন্য তো কবিই হয়ে যেতে ইচ্ছে করছে।
--এই তো আবার শুরু হয়ে যাচ্ছে কিন্তু...আমি এবার সত্যিই মাইন্ড করব!
--ওকে সরি ম্যাডাম। এবার প্লিজ বলুন কেন আপনি প্রেমহীন জীবন কাটাচ্ছেন?
--কি প্রেম করব? আমার কেন জানি মনে হয় ছেলেরা ভালোবাসার মানেই জানেনা। ভালোবাসা কি সেটাও বুঝেনা। তারা তাদের সাময়িক মোহটাকে প্রেম ভেবে ভুল করে। একটা সময় যখন মোহভঙ্গ হয়, তখন সেই রিলেশনকে তারা বোঝা ভাবতে শুরু করে। পালিয়ে বাঁচতে চায়...
--এক্সকিউস মি! এভাবে জেনারালাইজ করা বোধ হয় ঠিক হচ্ছে না। সবাই কিন্তু এক না...
--জানতাম আপনি মাঝপথে এটাই বলবেন। আমি আমার কাজিন, বান্ধবীদের অনেক ঘটনা দেখেছি...
ওদের তর্ক বেশ কিছুক্ষন চলল। এদিকে বাস নির্দিষ্ট সময়ের বেশ কয়েকঘন্টা আগেই গন্তব্যে চলে এসেছে। তখন ভোর ৪টা। ৬ টার আগে তো কোনোভাবেই পৌছানোর কথা ছিল না!
--দেখেন তো একটা ঝামেলায় পড়লাম না? খালুকে বলেছিলাম ৬টার দিকে স্টপেজে থাকতে। এখন কি করি?
--খালুকে একটা ফোন দিয়ে বলেন যে আপনি চলে এসেছেন।
--যা ধারনা করেছিলাম তাই...ফোন ধরছে না। বোধ হয় গভীর ঘুমে এখন।
--ওয়েটিং রুমে কিছুক্ষন বসতে পারেন। আর যদি কিছু মনে না করেন, খালু না আসা পর্যন্ত আমি আপানাকে সঙ্গ দিতে পারি।
--থ্যাংক্স এ লট নিরব। কথাটা হয়ত আমিই আপনাকে বলতাম। কিন্তু আপনি খামাখা আমার জন্য কষ্ট করবেন?
--এটা একটা কথা বললেন? আপনার সাথে কাটানো প্রতিটি মূহুর্ত যে আমার কাছে কতটা মূল্যবান সেটা আমি আপনাকে বলে বোঝাতে পারব না। সত্যি বলতে কি......
--বুঝছি বুঝছি আর বলতে হবে না। আচ্ছা আপনি কি হোটেলে উঠছেন?
--হ্যা। শৈবাল হোটেল। আগে থেকেই রুম বুক করে রেখেছি।
হঠাৎ করেই সেলফোন বেজে উঠল সূচীর। তার খালু ফোন করেছে। তিনি বাসা থেকে অলরেডী রওনাও দিয়ে ফেলেছেন। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই এখানে চলে আসবেন।
--নিরব, খালু এখনই চলে আসবেন। আপনার সাথে সময়টা খুবই ভালো কেটেছে আমার। থ্যাংক্স এ লট ফর ইউর কোম্পানী...আর আপনার “সমুদ্র দেখা” শুভ হোক। টেইক কেয়ার!
--টেইক কেয়ার টু সূচী।
--বাই।
--বাই।
......চলবে